Type Here to Get Search Results !

খামেনির হদিস নেই এক সপ্তাহেরও বেশি, দেশজুড়ে উদ্বেগ

Abdul Jabbar
ছবি/ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি

খামেনির অনুপস্থিতিতে জল্পনা তুঙ্গে, উত্তপ্ত ইরান ও মধ্যপ্রাচ্য

ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলা, যুদ্ধবিরতি ও কূটনৈতিক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্য জর্জরিত। এমন উত্তাল সময়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রায় দশদিন ধরে প্রকাশ্যে অনুপস্থিত থাকাকে ঘিরে দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক উপস্থাপক পর্যন্ত সম্প্রচারে প্রশ্ন তোলেন, “মানুষ জানতে চায়, আয়াতুল্লাহ খামেনি কোথায়, কেমন আছেন?” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল পর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

খামেনির দপ্তরের একজন কর্মকর্তা মেহেদি ফাজায়েলি জানান, “সবাই উদ্বিগ্ন। আমাদের নেতার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, তিনি সুস্থ আছেন।” তবে তার বক্তব্যে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য না থাকায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।

বিস্ময়ের বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক হামলা, ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং ট্রাম্প ঘোষিত যুদ্ধবিরতির সময়েও খামেনির কোনো বক্তব্য, ভিডিও বা বার্তা প্রকাশিত হয়নি। সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তিনি একটি সুরক্ষিত বাঙ্কারে অবস্থান করছেন এবং সম্ভাব্য গুপ্তহত্যার আশঙ্কায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছেন।

রাজনৈতিক বিভাজন ও নেতৃত্বের প্রশ্ন
রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামজেহ সাফাভি জানান, ইসরায়েল এখনো খামেনিকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে – এমন ধারণা থেকেই কঠোর নিরাপত্তা বলবৎ রয়েছে। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সামরিক সিদ্ধান্তগুলো খামেনির অনুমোদন ছাড়াই কি নেওয়া হয়েছে?

এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে দুঃশ্চিন্তা ও বিভাজন বাড়ছে। প্রভাবশালী সংবাদপত্র ‘খানেমান’-এর সম্পাদক মোহসেন খালিফে বলেন, “তাঁর অনুপস্থিতি আমাদের ব্যথিত করেছে। যদি তিনি মারা যান, তবে তা হবে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়।”

বিশেষ করে আসন্ন আশুরা উপলক্ষে তাঁর অনুপস্থিতি আরও বার্তা বহন করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চ্যাটহ্যাম হাউজের সানাম ভাকিল বলেন, “আশুরায় খামেনিকে না দেখলে তা নেতৃত্বর ঘাটতির প্রমাণ হিসেবেই ধরা হবে।

নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা
এই শূন্যতার মধ্যে ইরানের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের মধ্যে নতুন জোট গঠনের তৎপরতা দেখা গেছে। মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা নিরসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তার সঙ্গেই রয়েছেন বিচার বিভাগের প্রধান মোহসেনি-এজেই ও সেনাপ্রধান মুসাভি।

পেজেশকিয়ান বলেন, “যুদ্ধ আমাদের পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দিয়েছে। এটি একটি বড় সুযোগ।” সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয়তাবাদের আবেগ কাজে লাগিয়ে জনমত নিজেদের দিকে টানার প্রচেষ্টা চলছে – যেমন আজাদি স্কয়ারে লাইট শো ও অর্কেস্ট্রা পারফরম্যান্স আয়োজন।

তবে এই প্রচেষ্টাকে ঠুনকো বলে আখ্যায়িত করেছেন কট্টর রক্ষণশীল সাঈদ জালিলি। তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক দল প্রেসিডেন্টের আলোচনাকামী মনোভাবকে 'অযোগ্যতা' বলে দাবি করছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থানেই অটল রয়েছে এবং সেনাবাহিনীর একাংশ ও সংসদের বড় অংশ তাদের সঙ্গে।

প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র আলি আহমাদনিয়া পাল্টা জবাবে বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করে এসেছি, এখন দেশীয় শত্রুদের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে।

পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও পারমাণবিক সংস্থার প্রধান এসলামি একযোগে ঘোষণা দিয়েছেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখবে এবং পারমাণবিক কর্মসূচি নতুন করে সক্রিয় করা হবে।

সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

Image

About Us

সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি: ফয়সল আহমদ