Type Here to Get Search Results !

কারাগারে আওয়ামীদের রাজকীয় জীবন, প্রশাসন নীরব!

Abdul Jabbar


দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসন শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও ভারতের উদ্দেশে পলায়নের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করে। অনেকেই আশা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ন্যায়বিচারের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা দুর্নীতি, দমনপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুরাহা করবে। কিন্তু বাস্তবতা যেন আরও বিভ্রান্তিকর।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতা ভিআইপি বন্দি হিসেবে রাজকীয় সুবিধা ভোগ করছেন। মোটা অঙ্কের বিনিময়ে কারা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তারা পাচ্ছেন আলাদা কক্ষ, বিশেষ খাবার এবং নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের সুযোগ।

বিশেষ সূত্র জানায়, কারাগারে রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য ‘মেডিকেল শিফটিং’-এর নামে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। জেল হাসপাতালের নির্দিষ্ট একটি সিন্ডিকেট এ কাজে যুক্ত, যারা নিয়মিতভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ‘হৃদরোগ’ বা ‘চাপজনিত সমস্যা’র অজুহাতে নেতাদের হাসপাতাল ওয়ার্ডে রাখছেন।

অন্যদিকে, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এক মাসের ব্যবধানে মুক্তি পেয়েছেন অন্তত ২৫০ জন আওয়ামী নেতা-কর্মী। যাদের অনেকেই বিভিন্ন থানার ওসি, এসপি ও কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে জামিন পেয়েছেন। মুক্তির পর তাদের কেউ কেউ আবার বিদেশ গমন করেছেন, কেউ এলাকায় ফের পুরোনো প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করছেন।

মাঠ প্রশাসনে ‘প্রীতির’ প্রভাব

যদিও সরকারপক্ষের উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তা আওয়ামী দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা একেবারেই উল্টো। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, থানার ওসি থেকে শুরু করে ডিআইজি পর্যায়ের কর্মকর্তারাও এখনো প্রাক্তন ক্ষমতাসীনদের প্রভাব ও লেনদেনের বলয়ে আবদ্ধ। একাধিক থানার ওসিকে সরিয়ে অন্যত্র বদলি করা হলেও, বদলির পর তাদের জায়গায় যেসব কর্মকর্তা এসেছেন, তারা অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে উল্টো অভিযোগকারীদের চাপের মুখে ফেলছেন।

পুলিশের বিশেষ শাখা (SB) সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের বেশিরভাগই তৃণমূল পর্যায়ের, শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা পলাতক বা গোপনে রাজনৈতিক পুনর্গঠনে ব্যস্ত। এমনকি কারাগার থেকে যারা মুক্তি পাচ্ছেন, তাদের অনেকেই আবার দলীয় পুনর্গঠন কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।

হামলা, হুমকি, অথচ মামলা অনুপস্থিত

আন্দোলনকামী ছাত্রদের সমন্বয়কারীদের ওপর একের পর এক হুমকি, ছুরিকাঘাত ও ঘৃণাপূর্ণ প্রচারণা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিশেষ করে সমন্বয়কারী আশিকুর রহমান, শিহাব, আয়াশসহ অনেকেই হত্যার হুমকি পেয়েছেন এবং কিছু জিডি করা হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

ফেসবুকে প্রকাশ্যে ‘সমন্বয়কদের ঝুলিয়ে হত্যার’ আহ্বান জানিয়ে দেওয়া পোস্টেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং সেই পোস্টদাতারা স্থানীয় পুলিশের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে উঠে আসে, ময়মনসিংহের এক কথিত সাংবাদিক বদরুল আমীন পুলিশের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অপপ্রচার ও চাঁদাবাজিতে জড়িত।

কারাগারে চলছে ‘আওয়ামী প্রশাসন

ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা আওয়ামী নেতারা সেখানে নিয়মিত বৈঠক করছেন, রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন এবং কারারক্ষীদের মাধ্যমে সাধারণ বন্দিদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে জেল সুপারের নাম নিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। ডেপুটি জেলার ও প্রহরীদের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে ‘রাতের মুক্তি’ বা গোপন সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

পুলিশ প্রশাসনে গভীর আঁতাত

জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমের ব্যবসায়ী স্বার্থ রক্ষায় নির্দিষ্ট কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের বালু ব্যবসা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক স্বার্থে কর্মকর্তাদের ব্যবহারের বিষয়টি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ সদর দফতর থেকে বদলি আদেশ হলেও প্রভাব খাটিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ময়মনসিংহে টিকে রয়েছেন।

নিষ্ক্রিয় উচ্চ মহল

যদিও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারপরও যারা সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত ছিলেন, তারা ময়মনসিংহেই বহাল। তাদের কেউ কেউ পিপিএম পদক পেয়েছেন, যদিও তারা সরাসরি রাজনৈতিক পক্ষপাতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছাত্রদলের নেতাদের নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগেও প্রশাসন নিরব।

Kawsar Gazi----

About Us

সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি: ফয়সল আহমদ