সিলেটে পাথর লুটের মহোৎসব: বিএনপি নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ
এক সময় পাথরের রাজ্য ছিল সিলেটের কোয়ারি ও নদীগুলো। এখন সেখানে দেখা যায় অসংখ্য গর্ত আর ধু-ধু চর। বিগত ১০ মাসে প্রকাশ্যে পাথর লুটপাটে এলাকা প্রায় পাথরশূন্য। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এই লুটের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
বেলার অভিযোগ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার জানান, হাজার হাজার শ্রমিক প্রকাশ্যে পাথর তুলছে অথচ প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জাফলং এলাকা পরিদর্শনে গেলে পরিবেশ ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টাদের গাড়িবহর আটকে দেয় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রদল, যুবদল ও শ্রমিক দলের নেতারা।
সরকারি সিদ্ধান্ত ও বাস্তবতা
সরকার ১৭টি কোয়ারির ইজারা স্থগিত করলেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। পিয়াইন, ধলাই নদ ও জাফলং এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন অব্যাহত। স্থানীয়দের ধারণা, গত ১০ মাসে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে।
লুটের পদ্ধতি ও বিপর্যয়
শ্রমিকরা কোদাল, বেলচা দিয়ে মাটি খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করে বারকি নৌকায় করে ক্রাশার মেশিনে পৌঁছে দেন। পরে ট্রাক বা পিকআপে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়। কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের ‘সাদা পাথর’ পর্যটনকেন্দ্রটিও লুটপাটে বিপর্যস্ত—প্রবাহমান জলের সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে এলাকা।
বিএনপি নেতাদের সম্পৃক্ততা ও দলীয় ব্যবস্থা
জাফলং, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মীর জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও যুবদলের একজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিক্ষোভ ও লুটপাটে ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দলের নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
আইনি ব্যবস্থা ও ব্যর্থতা
৯টি মামলায় ২৬৬ জনকে আসামি করা হলেও গ্রেপ্তার মাত্র একজন। পুলিশ জানায়, অধিকাংশ আসামি জামিনে আছেন, বাকিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় বিচারহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযান চললেও থেমে নেই লুট
প্রথম দিকে গোপনে চললেও ৫ আগস্টের পর প্রকাশ্যে শুরু হয় লুটপাট। প্রশাসনের অভিযান সাময়িক হলেও পরে লুটেরা ফিরে আসে। কয়েকবার ম্যাজিস্ট্রেটকে পর্যন্ত পাথর ছুড়ে তাড়িয়ে দিয়েছে তারা। জেলা প্রশাসনের দাবি, অভিযান ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার ফলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে।
তবে স্থানীয়দের মতে, এসব ব্যবস্থা অস্থায়ী। হাজার হাজার মানুষের জড়িত থাকার কারণে প্রশাসনও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না। পাথরের রাজ্য আজ ধ্বংসের মুখে।
স্টাফ রিপোর্টার (নাগরিক ভিউ)

