বিয়ের দুই সপ্তাহ পর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত লিভারপুল তারকা দিয়োগো জোতা


প্রকাশিত:

 

প্রতিভাবান ফরোয়ার্ড দিয়োগো জোতাবিশ্ব ফুটবল অঙ্গন

আজ শোকস্তব্ধ। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন লিভারপুল ও পর্তুগাল জাতীয় দলের অন্যতম প্রতিভাবান ফরোয়ার্ড দিয়োগো জোতা। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছিলেন—বিয়ে করেছিলেন দীর্ঘদিনের সঙ্গী রুতে কার্দোসোকে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, জীবনের রঙিন অধ্যায় শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই থেমে গেল তাঁর পথচলা।

ঘটনাটি ঘটেছে স্পেনের জামোরা শহরের কাছাকাছি এলাকায়। স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে জোতা ও তাঁর ছোট ভাই আন্দ্রে সিলভা একটি ল্যাম্বরগিনি গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের গার্ডরেল ভেঙে নিচে পড়ে যায় এবং মুহূর্তেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দ্রুত পৌঁছালেও প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হয়নি কাউকেই।

১৯৯৬ সালের ৪ ডিসেম্বর পর্তুগালের পোর্তোতে জন্ম নেওয়া দিয়োগো জোতা মূলত তাঁর পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন প্যাসোস ডি ফেরেইরা ক্লাবে। এরপর তিনি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, উলভস এবং অবশেষে ২০২০ সালে লিভারপুলে যোগ দেন। জার্গেন ক্লপের অধীনে দ্রুতই তিনি দলের অন্যতম আস্থাভাজন খেলোয়াড়ে পরিণত হন।

তিনি লিভারপুলের জার্সিতে ১৫০টির বেশি ম্যাচ খেলেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ গোল করে বহু ম্যাচে দলকে জয় এনে দিয়েছেন। গত মৌসুমেও তার পারফরম্যান্স ছিল চমৎকার, বিশেষ করে ইউরোপা লিগে।

জোতা ও রুতে কার্দোসোর প্রেমের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। তারা একসঙ্গে বড় হয়েছেন, জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত একসঙ্গে পার করেছেন। তাদের দুটি সন্তানও রয়েছে। ২০২৫ সালের ২২ জুন, পর্তুগালের লিসবনে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতিতে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

বিয়ের পর পরই জোতা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময় কাটাচ্ছি। ফুটবল, পরিবার, সবকিছু এখন পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে।

লিভারপুল ক্লাব এক বিবৃতিতে জানায়,
“আমরা শোকাহত। দিয়োগো আমাদের পরিবারের অংশ ছিল, এবং তার মৃত্যু আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে।”

পর্তুগাল ফুটবল ফেডারেশন জানিয়েছে, জাতীয় দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় ও স্টাফ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং ইউরো ২০২৫-এ দলের পরবর্তী ম্যাচে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে জোতার স্মরণে।

লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, মোহাম্মদ সালাহ, কেভিন ডে ব্রুইন, এমবাপে—সবাই সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন। মেসি লিখেছেন,
“তুমি একজন যোদ্ধা ছিলে, দিয়োগো। খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলে। ফুটবল আজ একজন শিল্পী হারাল।”

দিয়োগো জোতার ক্যারিয়ারে অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত রয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:

  • ২০২১ সালে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক।

  • ২০২২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসিস্ট।

  • জাতীয় দলের হয়ে ইউরো কোয়ালিফায়ারে ক্রিটিক্যাল গোল।

তাঁর খেলার ধরণ ছিল গতিময়, আত্মবিশ্বাসী এবং ট্যাকটিক্যালি বিচক্ষণ। ক্লপ বহুবার জোতাকে “The Silent Killer” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন—কারণ তিনি কখনোই অহংকার করতেন না, কিন্তু মাঠে প্রতিপক্ষকে নিঃশব্দে ভেঙে দিতেন।

বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্ত এই মৃত্যুতে শোকাহত। লিভারপুলের অনুরাগীরা অ্যানফিল্ড স্টেডিয়ামের বাইরে মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনেও চলছে মৌন মিছিল।

টুইটারে ট্রেন্ড করছে—
#RIPJota
#ForeverRed
#JusticeForJota

অনেকে বলছেন, "আমরা শুধু একজন ফুটবলার হারাইনি, হারিয়েছি এক হৃদয়বান মানুষকে।"

লিভারপুল ক্লাব কর্তৃপক্ষ ও পর্তুগিজ ফেডারেশন সম্মিলিতভাবে এক রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এমনকি ইউরোপীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (UEFA) জোতার সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালনের নির্দেশ দিয়েছে।

দিয়োগো জোতা ছিলেন এমন একজন খেলোয়াড়, যিনি মাঠে নিজের সামর্থ্য দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনতেন, আবার মাঠের বাইরে ছিলেন সবার প্রিয়, নম্র ও মার্জিত। তাঁর অকাল প্রয়াণ বিশ্ব ফুটবলে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করলো।

তিনি হয়তো চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর খেলা, চরিত্র ও আত্মার প্রতিচ্ছবি ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবে।