সমসাময়িক বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়


প্রকাশিত:

 

স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে : 


র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)


সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার মিটফোর্ড এ এক ব্যক্তি কে নৃশংসভাবে ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যার ঘটনায় ২ জন আসামি গ্রেফতার ও চট্টগ্রামে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ১১ খন্ড করে গুম করার চেষ্টা মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার সহ র‌্যাবের সমসাময়িক বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন র্যাব সদর দপ্তর। আজ ১২ জুলাই সকালে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। 


র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে হত্যাকারী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ, মাদক দ্রব্য উদ্ধার, ছিনতাইকারী, অপহরণ, প্রতারক ও বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। 


গত ০৯ জুলাই  রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগ নামে একজনকে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটে। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভিকটিমের বড় বোন বাদী হয়ে ডিএমপির কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। উক্ত হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামি ১। আলমগীর (২৮) পিতা-মৃত- আলী মিয়া, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা এবং ২। মনির @ লম্বা মনির (৩২) পিতা- মোঃ শফিক, দাউদকান্দি, কুমিল্লাদ্বয়কে গ্রেফতার করা হয়। 


গত ০৯ জুলাই চট্টগ্রামের একটি ফ্ল্যাটে বাসার ভেতরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে নিজ স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ ১১ খন্ড করে ঘরের বিভিন্ন স্থানে ফেলে রেখে ঘাতক স্বামী পালিয়ে যায়। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন রুবেল বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় একটি হত্যা মামলার দায়ের করেন। উক্ত হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল অভিযান পরিচালনা করে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বিজয়নগর থানাধীন ফুলবাড়িয়া এলাকা হতে উক্ত হত্যাকান্ডের মূল আসামি মোঃ সুমন (৩৫), পিতা-মোঃ সুন্দর আলী, থানা-সদর দক্ষিন, কুমিল্লা’কে গ্রেফতার করা হয়। পারিবারিক কলহের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


র‌্যাব ফোর্সেস এর মহাপরিচালক মহোদয় বলেন যে, দেশের অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ন্যায় র‌্যাব ফোর্সেসও দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য লাভ। গত ০৯ জুলাই ২০২৫ তারিখ রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগ নামে একজনকে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটে। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত ০২ জন এজাহার নামীয় ৪নং আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫নং আসামি মনির লম্বা মনির (৩২)কে আমরা গতকাল রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। অপর একটি ঘটনায় গত ০৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রামে একটি বাসার ভেতরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে নিজ স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ ১১ খন্ড করে ঘরের বিভিন্ন স্থানে ফেলে রেখে ঘাতক স্বামী পালিয়ে যায়। 

নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটিও এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। উক্ত হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-০৯ এর যৌথ আভিযানিক দল ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় অভিযান পরিচালনা করে গতকাল উক্ত হত্যাকান্ডের মূল আসামী মোঃ সুমন’কে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। গত ১১ জুলাই ২০২৫ বিকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে ফোন দিয়ে মহিলা কন্ঠে জানানো হয় যে, ঢাকা কাঠমান্ডু ফ্লাইটে বোমা জাতীয় কিছু থাকতে পারে, তার প্রেক্ষিতে বিমানটি থামানোর অনুরোধ জানানো হয় এবং ফ্লাইটি থামিয়ে ব্যাপক তল্লাশি করে কোন কিছুই পাওয়া যায়নি। 

এর প্রেক্ষিতে, উক্ত ০১৬২৩৬৯৬২৮২ নাম্বারের অবস্থান সনাক্ত করে উত্তরা মধ্য দক্ষিণখান এলাকায় একটি বাসায় সেনাবাহিনী ও র‍্যাব-১ এর একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। উক্ত নাম্বরের ব্যবহাকারী বর্তমানে ইমনের স্ত্রী তাহমিনা ও ইমনের মা এবং ইমরান, র‍্যাবের হেফাজতে রয়েছে। তিনি আরোও বলেন যে, মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র‌্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। 


গত ০২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় কতিপয় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আমরা ০৩ জন আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। 


এছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদ নগরে ট্রিপল মার্ডার এর ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানকে মব ভায়োলেন্স এর মাধ্যমে অযাচিত ঘটনায় ০৬ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 


সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ০৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।


কুমিল্লায় এক নারীকে শ্লীলতাহানি এবং নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গত ০৩ জুলাই এ ঘটনার প্রধান আসামী শাহ পরানসহ আরও ছয় জন আসামীকে দ্রæততম সময়ে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।  এছাড়াও ভোলার তজুমদ্দিনে চাঁদার জন্য স্বামীকে মারধর এবং স্ত্রীকে ধর্ষণ মামলার আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।


গত ২ জুলাই  রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ‘কব্জিকাটা গ্রæপ’ এর অন্যতম প্রধান সহযোগী টুন্ডা বাবুকে নড়াইল থেকে র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে।


সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণের ঘটনায় জড়িত ০৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।


রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত মোঃ হাফিজ উল্লাহকে র‌্যাব পরিচয়ে ৩ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অপহরণ ও মুক্তিপন দাবী করে। এ প্রেক্ষিতে গত ১৩ এবং ১৪ জুন এই অপহরণের অন্যতম প্রধান হোতাসহ ০৫ জন অপহরণকারীকে র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।


গত ২৯ জুন কুমিল্লা থেকে অপহৃত ০৭ বছরের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে অপহরণের ০৮ দিন পর উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।


এছাড়াও তিনি র‌্যাবের মাদক বিরোধী অভিযানের কথা তুলে ধরে বলেন  যে, গতকাল হবিগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে ১৮০০ বোতলের অধিক বিদেশী মদ এবং ০২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও র‌্যাব-১৩ কর্তৃক মাদক বিরোধী অভিযানে ১৫৪ কেজি গাঁজাসহ ০২ জন মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মাদক মামলায় এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার আসামিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি ২৭ হাজার কেজি গাঁজা, প্রায় ১ লক্ষ ৫ হাজার বোতল ফেন্সিডিল, প্রায় ৪২ লক্ষ পিস ইয়াবা, দেশী ও বিদেশী বিপুল পরিমাণ মদ ইত্যাদি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। গত ০৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে রাজশাহী মহানগরীর টিকাপাড়া থানা হতে পুলিশের লুন্ঠিত ০১ টি বিদেশি পিস্তল, ০১টি ম্যাগাজিন ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। 


গত ০৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাভজনক বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে শতাধিক গ্রাহকের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে ০১ জন নারী এবং ০২ জন বিদেশী নাগরিকসহ মোট ০৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।


গত ৩০ জুন ২০২৫ তারিখ লক্ষীপুরের রায়পুরে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বাবা খুনের মামলার প্রধান আসামি মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


তিনি আরোও বলেন গত ০৫ আগষ্ট ২০২৪ হতে ৩০ জুন ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত আসামী গ্রেফতার ও উদ্ধার এর একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেনঃ

অস্ত্র ও গোলাবারুদ মামলায় এ পর্যন্ত ১৭২ জন আসামিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি প্রায় ৫ শতাধিক অস্ত্র ও ১০ হাজারেরও অধিক গোলাবারুদ র‌্যাব উদ্ধার করতে সক্ষম হয় । এ পর্যন্ত ২৭ জন জলদস্যু ও বনদসুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


মানবপাচার মামলায় এ পর্যন্ত ৭৩ জন আসামিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি ৪২ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে।


অপহরণ মামলায় পাচঁ শতাধিক আসামিকে গ্রেফতার এবং প্রায় ৭৫০ জন অপহৃতকে র‌্যাব কর্তৃক উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।


র‌্যাবের পোষাক ব্যবহার এবং ভুয়া র‌্যাব পরিচয় দিয়ে অবৈধ কার্যকলাপের দায়ে ০৫ জন ভুয়া র‌্যাব সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।


হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় এ পর্যন্ত বাইশ শতাধিক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির ঘটনায় ৭২ জন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম দমনে রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে প্রায় পাঁচশত ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


প্রতারণা মামলায় র‌্যাব ৪৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।


বিভিন্ন গ্রæপের ১১ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


ডাকাতি মামলায় প্রায় চারশত জনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ দেশী ও বিদেশী অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।


মাদক মামলায় এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার আসামিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।


র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, আইনের শাসন সমুন্নত রাখা, মানবাধিকার রক্ষা, সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, অপরাধ চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করা এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আশার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে র‌্যাব আরও দৃঢ়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। র‌্যাব হবে জনগণের প্রকৃত বন্ধু ও আস্থার প্রতিক। জনগণের বিশ্বাস অর্জন করাই হচ্ছে র‌্যাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।