Type Here to Get Search Results !

উচ্চ আদালতের নির্দেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার ভবন উচ্ছেদ, হিন্দু সম্পত্তি উদ্ধার

Abdul Jabbar

 সংবাদদাতা: দেলোয়ার হোসাইন মাহদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ছবিঃ জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কেন্দ্রস্থল মসজিদ রোডে বহু বছর ধরে দখলে থাকা একটি অর্পিত সম্পত্তি অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ‘জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’-সহ দুটি অবৈধ স্থাপনা ভেঙে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের বেদখল হয়ে যাওয়া ২৫ শতাংশ জমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হলো।

এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার নুসরাত জাবীন। তিনি দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। জেলা পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও এতে সহায়তা প্রদান করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ উচ্ছেদে কোনো ধরনের স্থগিতাদেশ ছিল না এবং পুরো প্রক্রিয়াটি উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুসারে সম্পন্ন হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১২ সালে লীলাময় ভট্টাচার্য নামের একজন ব্যক্তি দাবি করেন, উক্ত জমি তার পৈতৃক সম্পত্তি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত ছিল এবং তাতে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠে। তিনি এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে মামলা করেন এবং ২০১৬ সালে আদালত তার পক্ষে রায় দেন। সরকারপক্ষ পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপিল করে, কিন্তু ২০১৯ সালে আপিল ট্রাইব্যুনাল মূল রায় বহাল রাখে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন অধিশাখা এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনের আওতায় রায়ের কার্যকারিতা নিশ্চিত হয়।

আদালতের রায়ের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন চেম্বার কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য দখলদারদের জায়গা খালি করার জন্য নোটিশ প্রদান করে। তবে এ নিয়ে চেম্বার ভবনে থাকা কিছু ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, তাদেরকে উচ্ছেদের বিষয়ে আগে থেকে কোনো ধরনের নোটিশ দেওয়া হয়নি এবং চেম্বার কর্তৃপক্ষও তাদের কিছু জানায়নি।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাবীন জানান, “আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীই অভিযান পরিচালনা করেছি। দোকানদারদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “আইনানুযায়ী এই জায়গার মালিকানা নির্ধারিত হয়েছে এবং আদালতের রায় বাস্তবায়নের জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

জমির মূল মালিক নির্মল ভট্টাচার্য বলেন, “এই জমি আমাদের পূর্বপুরুষদের ছিল। নানা জটিলতার কারণে এটি একসময় অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। আমরা ২০১২ সালে আইনি পদক্ষেপ নিই এবং ২০১৮ সালে মামলায় জয়লাভ করি। এতদিন পর হলেও সত্যের জয় হয়েছে। আমরা কৃতজ্ঞ যে, প্রশাসন ও আদালত আমাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দিয়েছে।”

দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা এই সম্পত্তি উদ্ধারের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি দৃষ্টান্তমূলক আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো। এই ঘটনায় প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, আইনগত প্রক্রিয়া এবং মালিকানা প্রতিষ্ঠায় আদালতের রায়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।

About Us

সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি: ফয়সল আহমদ