Type Here to Get Search Results !

ফেনী-কুমিল্লায় ফের প্রবল বন্যার আশঙ্কা, প্রশ্নবিদ্ধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তুতি।

Abdul Jabbar

রিপোর্টার তাকি হাসান

০৯ জুলাই



গত বছরের জুলাই মাসের রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতির পর আগস্টেই বাংলাদেশ এক ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। ভারতের কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে বাঁধ ছেড়ে দেওয়ার ফলে ভয়াবহ এই বন্যা ফেনী ও কুমিল্লা জেলাকে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত করে তোলে। ওই বন্যায় সারাদেশে প্রায় ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটে, যার মধ্যে ৪৭ জনই মারা যান ফেনী ও কুমিল্লায়। ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা এখনও অনেক এলাকাবাসীর জীবনে রয়ে গেছে গভীরভাবে।

এক বছরের ব্যবধানে সেই স্মৃতি মুছতে না মুছতেই আবারও ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। জেলার মুহুরি ও সেলোনিয়া নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ১.৩ থেকে ১.৫৭ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৫টিরও বেশি স্থানে নদীর তীরবর্তী বাঁধ ভেঙে গেছে, যার ফলে ২৫ থেকে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শহরের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা ও চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ১-২ দিনের মধ্যে টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারতের ত্রিপুরা থেকে অতিরিক্ত পানির প্রবাহ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত বছরকার বন্যা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। দুর্যোগ প্রস্তুতি, স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি ত্রাণ সরবরাহে কিছু অগ্রগতি দেখা গেলেও প্রশ্ন রয়ে গেছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিয়ে। সাময়িক তৎপরতার বাইরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, নদী ব্যবস্থাপনা, আশ্রয়কেন্দ্র উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোতে ঘাটতি রয়ে গেছে। বিশেষ করে ফেনী অঞ্চলে বাঁধগুলোর নাজুক অবস্থা প্রমাণ করে, টেকসই অবকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে পরিকল্পনার অভাব এখনো কাটেনি।

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সেনাবাহিনী (BAF), স্থানীয় প্রশাসন ও কিছু এনজিও জরুরি খাদ্যসামগ্রী ও চিকিৎসাসেবা সরবরাহে ভূমিকা রাখলেও, মাঠপর্যায়ে অনেকেই অভিযোগ করছেন, সহায়তার সমন্বয় এবং সময়মতো পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। অনেক দুর্গম গ্রাম এখনও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে যেখানে খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রতিবেশী দেশের আচরণগত অনিশ্চয়তা মাথায় রেখে নদী ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। না হলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী-কুমিল্লাসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভবিষ্যতেও বারবার দুর্যোগের মুখে পড়বে।

এই পরিস্থিতিতে কেবল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং টেকসই ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করার তাগিদই এখন সবচেয়ে জরুরি।

About Us

সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি: ফয়সল আহমদ